রোজ অফিস যাবার সময় ইন্দু বারান্দাতে দাঁড়িয়ে থাকে আকাশ খেয়াল করেও চোখ দিয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টাটুকুও করে না। ও যে ইন্দু’র চোখে চোখ রাখতে পারে না। মেয়েটি যদি কিছু মনে করে, সেই ভয়ে।
বাড়ি ফেরার পথে আকাশদের গলির মুখেই একটা মুদিখানা আছে সামনে গিয়ে আরেকটা সরু গলি হয়ে আকাশকে বাসায় যেতে হয়।
আজ ইন্দু সে গলিতে একা দাঁড়িয়ে, কেবল সন্ধ্যা হয় হয় এমন সময় কোন মেয়ে এত নিরব রাস্তাতে কেনই বা দাঁড়িয়ে আছে? আকাশ ওকে তো কখনই এভাবে রাস্তায় দাঁড়াতে দেখে নি ।
আকাশ ওকে পাশ কাটিয়ে বাসায় যাবে এমন প্রস্তুতিই নিয়েছে, এমন সময় ইন্দু পিছু ডাকলো-
আকাশ; আপনার সাথে আমার কথা আছে ।
অনেক অপেক্ষা আর আক্ষেপ মেয়েটির চোখেমুখে-
বলার অপেক্ষা
বলতে গিয়েও-
না বলার অপেক্ষা।
আরো কতশত অপেক্ষা
ঝিম মেরে আছে।
রেটিনাতে প্রবাহিত বিদ্রোহ
প্রেমের একনায়কতন্ত্র চলছেই;
এ নয় শুধু মোহ
আধমরা হৃদয়ে জীবনের অপেক্ষা।
ইন্দু’র চোখের কোণে জল স্পষ্ট হতে থাকে । ইন্দু কি বলতে চায় ?
এই প্রথম কোন মেয়ে আকাশ’র সাথে রাস্তায় কথা বলতে চাইছে। আকাশ মনে মনে বেশ ভয় পায়, মাথাতে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্ন ঘুর ঘুর করে। আকাশকে কেউ মেয়েদের সাথে রাস্তায় কথা বলতে দেখে নি, আড্ডা মারতে দেখেনি, সিগারেট কিংবা চাও খেতে দেখেনি। এলাকাতে ভালো ছেলের শ্রেষ্ঠ খেতাম নিয়েছে আকাশ, বেশ ভালইতো ছিল।
কাঁপা কন্ঠে আকাশ উত্তর ছুড়ে দিল-
জ্বী; বলুন;
আপনি কি বলেন তো ?
আমি মানুষ, কেন বলুন তো? আমি কি করেছি ?
নিজেকে আপনি মানুষ ভাবেন? কোন দিন মানুষ চিনেছেন নাকি দেখেছেন?
দেখুন ইন্দু আপনি কিন্তু একটু বেশি বেশি বলে যাচ্ছেন, তাছাড়া আমি তো আপনার সাথে কখনও কথাও বলিনি। কি বোঝাতে চাচ্ছেন একটু খোলাসা করে বলবেন প্লিজ?
আচ্ছা আপনি বোঝেন না, একটা মেয়ে কখন আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতো?
কখন তার চোখের কোণে অপেক্ষার কান্না উপচে পড়তো?
কখন প্রিয় মানুষটির বিয়ে ঠিক হয়েছে জেনেও তার সাথে কথা বলতে চাইতো?
অদ্ভুদ তো, সব প্রশ্নই অতীত কে ঘিরে! তবে বর্তমানে কি চাইছে ইন্দু? বেশ বোঝা যাচ্ছে ওর বর্তমানও আকাশকে ঘিরে।
দেখুন ইন্দু আপনি কি একটু ক্লিয়ার করবেন, আপনি কি বলতে চান ?
আকাশ! ভালোবাসা কাকে বলে আপনি জানেন ?
এই কথাগুলো আমাকেই বা কেন বলছেন ?
কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি;
আকাশ’র বুকের মধ্যে কেঁপে উঠলো। শীতল হতে থাকে পা থেকে মাথা’র সমস্ত মানব যন্ত্রগুলো। ইন্দু কাঁদছে, অগ্রহায়ণ মাসেও ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি ভেজা ইন্দু’র অনুভব আকাশ খুব কাছ থেকে পেলো। আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, “ইন্দু আমিও তোমাকে ভালোবাসি” খুব দেরি করলে ইন্দু, আজ যে আমি নিজেকে অন্যের কাছে আবদ্ধ করেছি।
ভুলে যদি যেতেই হয় তুমি সেটাই করো
যদি পরের মতে নিজেকে গড়ো
সেটাই না হয় করো।
নিজেকে দেখি সন্ধ্যা তারায়,
কখনো রাত দুপুরে তোমারই ছায়ায়।
বেহায়া হাতে কালির ছোপে-
আবোল-তাবোল পদ্যে,
সেদিনও কি মনে পড়বে?
কোন এক শ্রাবণের ডানায় চেপে
ভালোবাসার নিমন্ত্রনে
একাকি ইন্দু জোসনা দেয় গোপনে।
ভুলে যদি যেতেই হয় তুমি সেটাই করো
দূ-রে মেঘে ভাসাবো গোপন কান্না
তবুও সেটাই তুমি করো।
ভয়ে ভয়ে উঁকি দেয়া
ছোট্ট শালিকের ঠোঁটে বার্তা শুনবে,
যদি বসন্ত সখা নিমন্ত্রন জানায়
সেটা আমিই;
আম্র পল্লবে ছাঁই চাপা স্নিগ্ধ ঘ্রাণ ছড়াবে
এই ইন্দু ;
যদি হৃদয়ে উত্তাল সাগরের ঢেউ তোলে
সে আমারই কান্না,
তুমি সেটাই করো, যেটা তুমি করবেই।
কি’বা করার আছে আকাশ’র। সামনে আকাশ’র বিয়ে। এ কেমন খেলা বিধাতার?
কিছু বলছেন না যে?
দেখুন এভাবে হুট করে কোন ছেলেকে প্রোপোজ করাটা আপনার অন্যায়, আমি আমার পরিবার আর একটি মেয়ের কাছে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ।
আকাশ বুকে চাপা কষ্ট নিয়েও অবলিলায় ইন্দুকে কথাগুলো বলেছে।
আকাশ আপনি সত্যি করে বলুন তো কোনদিন কি আমাকে আপনি ভালোবাসেন নি?
হয়তো ভালোবেসেছি, হৃদয়ে গোপন কক্ষে ঠাঁই দিয়েছি। কিন্তু আজ কি সে পরিস্থিতি আছে?
বেশ; তবে সেই শান্তনা টুকু নিয়েই আমি ফিরে যাচ্ছি। আপনার নতুন জীবন খুব সুখের হোক। বলেই ইন্দু বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
ইন্দু এভাবে আকাশ’র জীবনে আসবে আবার ফিরেও যাবে কখনই কল্পনা করে নি আকাশ।
অনেক দিন পর আকাশ’র চোখে জল এলো।
সেই এলে;
শূণ্যতা ছাড়া কিছুই কি পেলে?
যদি এলেই, কান্না কেন দিলে?
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
ইন্দু’র সাথে আকাশের সর্ম্পকটাতে গ্রহন লেগেছে। কখন কথাই হয় নি ওদের। তবে দু’জন দু’জনকে খুব ভালোবাসে। সমাজ আর পরিবারের কথা রাখতে আকাশ একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। ঠিক তার আগেই ইন্দু আকাশের বুকে পূর্ণ জোনাসায় আলোকিত করতে চেয়েছে। কিন্তু আকাশ বুকে পাথর বেঁধে অন্ধকার আঁকড়ে ঘর বাঁধতে চায়। তাই ইন্দুকে ফিরিয়ে দেয়।
মন ভাঙ্গে ইন্দু’র মন ভাঙ্গে আকাশের। তবে কি আকাশে ইন্দু কখনই উঁকি দেবে না ?
০৭ জুলাই - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
১৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪